IQNA

মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান

হযরত ফাতিমা'র (সা: আ:) শাহাদাতের অজানা ইতিহাস [পর্ব-১]

20:00 - January 12, 2022
সংবাদ: 3471270
তেহরান (ইকনা): ৩ জুমাদাস সানিয়া ১১ হিজরী আহলুল বাইতের (আ.) মশহূর ( প্রসিদ্ধ ) অভিমত অনুসারে এবং অন্য একটি বর্ণনা মতে ১১ হিজরী সালের ১৩ জুমাদাল উলা নবী  দুহিতা হযরত ফাতিমা যাহরার ( আ.) শাহাদাত দিবস । ১১ হিজরী সালে মহানবীর ( সা.) ওফাতের ৭৫ দিন অথবা ৯৫ দিন পরে হযরত সিদ্দীকা - ই তাহিরা ফাতিমা যাহরা ( সা.) বিনতে রাসূলিল্লাহ শাহাদাত বরণ করেন। 

মহানবীর ওফাত উত্তর উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিশেষ করে রাসূলুল্লাহর ( সা.) খলীফা ( স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি ) নিয়োগের বিষয়কে কেন্দ্র করে উদ্ভুত মতভেদ ও ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলীতে যেমন : হযরত আলী ও হযরত ফাতিমার  ( আ.) বাসগৃহ আক্রমণ করা হলে তিনি ( ফাতিমা আ.) মারাত্মকভাবে আহত হন এবং এ আক্রমণে তাঁর পাঁজরের হাড় ভেঙে যায় ও তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায় অর্থাৎ তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মুহসিন শহীদ হন । অবশেষে ১১ হিজরীর ৩ জুমাদাস সানিয়া মতান্তরে ১৩ জুমাদাল উলা  জান্নাতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ .) শাহাদাত বরণ করেন এবং নিষ্ঠুর বেওয়াফা ( অবিশ্বস্ত খায়েন বিশ্বাসঘাতক গাদ্দার ) এ দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেন । তিনি মহানবীর ( সা.) আহলুল বাইতের ( আ.) প্রথম সদস্য যিনি মহানবীর ওফাতের পর তাঁর ( সা.) সাথে মিলিত হন।
 
আল - ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম ইবনে কুতাইবাহ আদ্ দীনাওয়ারী ( মৃ: ২৭৬ হি.) লিখেছেন : " তিনি ( হযরত ফাতিমা আ.) তাঁর পিতার ( সি.) ওফাতের পরে মাত্র ৭৫ রাত জীবিত ছিলেন । " ( দ্র : আল- ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ , খ : ১ , পৃ : ১৭ , ১ম সংস্করণ , ১৪২২ হি . প্রকাশক : দারুল কুতুব আল - ইলমীয়াহ্ , বৈরুত , লেবানন )
 
হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ.) হযরত আবু বকরকে বাই'আত না করে মৃত্যু বরণ করেন । এ ব্যাপারে আমরা সহীহ বুখারী ও আল - ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিব ।
 
ক. সহীহ বুখারী থেকে :
 
হাদীস নং ৪২৪০ - ৪২৪১ : উরওয়াহ হযরত আয়েশা ( রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি ( হযরত আয়েশা রা:) বলেন : নবী দুহিতা হযরত ফাতিমা - আলাইহাস সালাম - হযরত আবু বকরের ( রা:) কাছে পয়গাম পাঠিয়ে মদীনা ও  ফাদাক ভূখণ্ড যা মহান আল্লাহ তাকে ফাই ( বিনা যূদ্ধে শত্রুর কাছ থেকে প্রাপ্ত ভূসম্পত্তি বা ভূখণ্ড ও যমীনকে ফাই বলা হয় ) হিসেবে দিয়েছিলেন তা থেকে এবং খাইবরের ভূখণ্ডের খুমুস ( এক পঞ্চমাংশ ) থেকে তাঁর মীরাস ( উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য হিস্যা ) চাইলেন। 
 
অত:পর হযরত আবু বকর বললেন : রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : " আমাদের (অর্থাৎ নবী গণ) উত্তরাধিকারী নেই । আমরা  যা রেখে গেলাম ( অর্থাৎ আমাদের সম্পত্তি ও মাল সম্পদ সব ) সদকা ( দান ) । " আল-ই মুহাম্মদ ( হযরত মুহাম্মদের ( সা.) বংশধররা এই মাল ( সম্পদ - সম্পত্তি ) থেকে খেতে ও ভোগ করতে পারবে । আর মহানবীর ( সা.) যুগে মহানবীর (সা.) সদকা ( দানকৃত সম্পত্তি ) যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থা থেকে আমি ঐ সম্পদ ও সম্পত্তিতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন সাধন করব না এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ সব সম্পদ সম্পত্তির ব্যাপারে যা করেছেন এবং যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আমি কেবল সেগুলোই আঞ্জাম দেব । অত:পর হযরত আবূ বকর ঐ সব জমি ও ভূসম্পত্তি থেকে কোনো কিছুই হযরত ফাতিমার কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানালে হযরত আবু বকরের উপর তিনি [ হযরত ফাতিমা (আ.)] রাগাম্বিত হন , তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ( তাকে বর্জন ও ত্যাগ ) করেন এবং মৃত্যু বরণ করা পর্যন্ত তিনি তার সাথে কোনো কথাও বলেন  নি । আর মহানবীর ( সা.) ওফাতের পর তিনি ( ফাতিমা ) মাত্র ৬ মাস জীবিত ছিলেন [ অথচ মহানবীর (সা.) আহলুল বাইতের ( আ.) অভিমত : তিনি ( - আ. -) ৭৫ বা ৯৫ দিন জীবিত ছিলেন ] । যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর স্বামী আলী তাঁকে রাতের বেলাই দাফন করেন এবং  আবূ বকরকে জানান নি । আর আলী তাঁর জানাযার নামায আদায় করেন । হযরত ফাতিমার জীবদ্দশায় জনগণের কাছে আলীর এক বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান ( ওয়াজহ ) ছিল ।  .......  আর ঐ মাসগুলোতে ( যে মাসগুলোয় হযরত ফাতিমা জীবিত ছিলেন সে মাসগুলোতে ) তিনি ( আলী ) বাই'আতও করেন নি । ...... 
( দ্র : আবূ আব্দিল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল্ ইবনে ইব্রাহীম্ ইবনে বার্দেযবাহ্ আল - বুখারী [ ইমাম বুখারী ] প্রণীত সহীহ আল - বুখারী , ( ৩৮/৬৪ কিতাবুল মাগাযী , হাদীস নং ৪২৪০ - ৪২৪১ , পৃ : ১০৩৬ , প্রকাশক : দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন , প্রথম সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ২০০৮ )  

 

চলবে...
 
হযরত ফাতিমা'র (সা: আ:) শাহাদাতের অজানা ইতিহাস [পর্ব-১]
captcha